Posts

Showing posts from October, 2022

খুঁজে ফিরি সেই গ্রাম

খুঁজে ফিরি সেই গ্রাম মো: এনামুল হক  প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নদীর ধারের গ্রামে ছিলো আমার বেড়ে ওঠা। গ্রাম্য মাটির গন্ধ প্রায় সর্বত্র ম ম করতো। বৃষ্টির সময় শহর বাজারে আসতে হলে কাদার ভয়ঙ্কর চিত্র এখনো চোখে ভাসে। শহরের মতো বিদ্যুতের ঝলকানি তখনো গ্রামে স্বপ্নের অপ্সরা বলেই মনে হতো। এটা সম্ভবত সেই সাতানব্বই আটানব্বইয়ের কথা। সারা গ্রামে টিভি ছিলো মোটের উপর দুটো কি একটা। আধুনিকতার হালচাল তখন ছিটেফোঁটাও লাগেনি ঐ অজ পাড়া গায়। সভ্য আধুনিক কালের ঝলকানি না থাকলেও আমাদের ছোট্ট গ্রামটি ছিলো বটগাছের ছায়ার মতো অনাবিল শান্তির এক মূর্ত প্রতীক। এখনকোর মত গ্রাম্য রাজনীতির নোংরা চর্চা তখন ছিলো না বল্লেই চলে। চারিদিক ঐতিহ্য আর কুটির শিল্পের নানা শাখায় ছিলো যথেষ্ট টইটম্বুর। বর্ষায় নদী যখন ভরপুর হয়ে যেত তখন বদো মামু খ্যাপলা জালে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। আবার রাতের অন্ধকারে মিশো, ফজা, মুকা, মস্তাসহ গ্রামের অনেকেরই আলো কাটায় মাছ ধরা ছিলো নেশার মতো অভ্যাস। ঐদিকে মইরে, বিশে, বান্টাসহ অনেকেই দল বেঁধে জুত হাতে করে নদীর পাড় বেয়ে বেয়ে নিজের গ্রাম ছেড়ে দূরের গাঁয়ের ভিতর পর্যন্ত ঢুকে শৈল, গজাড় মাছ শিকার করে বেড়াতো। ক...

লাশের বাড়ি

লাশের বাড়ি মো: এনামুল হক  চারিদিকে এত মৃত্যুর মিছিল যেখানে লাশের বাড়িতে স্বজনের আনাগোনা সত্যিই চোখে পড়ার মত। সম্প্রতি কয়েকটা লাশের বাড়ি গিয়ে মনটা আমার খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। একটা বিষয়  গভীরভাবে লক্ষ্য করলাম, এলাকার কারো চিরবিদায়ে গ্রামের মাটির মানুষগুলো এখনও খুবই আবেগ প্রবণ। এছাড়া লাশের দাফন কার্য সম্পন্ন করা পর্যন্ত যতসব দায়িত্ব আছে তা সবাইমিলে আপন মনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যেভাবে নিজের ঘাড়ে তুলে নেওয়ার প্রবণতা প্রকাশ করে তা সত্যিই আমাকে যার পর নাই আপ্লুত করেছে। মৃতের এই অজুহাতে আবার ঐ সমাজে জিইয়ে থাকা কিছু ভুল বোঝাবুঝিরও অবসান হয় যা অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সেখানে শত্রু-মিত্রের ভেদাভেদটাও আর নেই। সকলের আবেগী প্রচেষ্টায় স্থানীয় বাজারের দোকান থেকে কখন যে লাশের জন্য কাফনের কাপড় চলে এসেছে তা হয়ত মৃতের পরিবার জানেই না। গ্রাম্য লেভেলে ভাল আরবি পড়তে জানা পড়শি ভাই-বোনেরা রেহেলের উপর কোরান শরীফ রেখে লাশের পাশে বসে সূরা ইয়াছিনসহ কোরানের নানান গুরুত্বপূর্ণ আয়াত সুমধুর কণ্ঠে পাঠ করতে থাকে। আর অন্যদিকে আপন জনের হঠাত্ মৃত্যুতে একান্ত কাছের মানুষগুলো হৃদয়ের গহীনে ভেসে ওঠা স্মৃতি বিজড়িত নানান কথা...

জীবন প্রকৃতি

জীবন প্রকৃতি মো: এনামুল হক ছোট্ট বালক। প্রত্যন্ত এক গ্রামের অজ্ঞাত কোনো পাড়ায় তার বসবাস। বিপ্লব ছেলেটার নাম। চোখে মুখে দৃঢ়তার স্পষ্ট ছাপ। কেবলই এক বোঝা ঘাসের আটি মাথায় করে ও বাড়ির উঠানে ধপাস করে ফেললো। আদুল গায়ে চিটপিটে ঘাম আছেই। তা হলে কি হবে, পাড়ার এক সমবয়সী বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েই যেন লাফিয়ে পড়লো গলিতে। বন্ধু রুমনের ফুটবলটাকে লাথি মারতে মারতে ও নিয়ে গেল নদীর ধারের পতিত জমির এক প্রশস্ত মাঠে। বলের শব্দে ঐ পাড়াতে আর যত সব খেলার সাথীরা ওর ছিল তারাও হুড়মুড় করে এসে জুটে গেল খেলার মাঠে। দুরন্তপনার রেশে বেশ খানিক চললো এক অনানুষ্ঠানিক ধুমধাম ফুটবল ম্যাচ। অবশেষে খেলায় ক্লান্ত দুরন্ত ছেলেগুলো কড়ই তলার বিস্তীর্ণ ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে। এই ফাঁকে খেলার একমাত্র দর্শক আমি বিপ্লবকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো? থ্রিতে- বলেই ও একটা স্বতঃস্ফূর্ত ডিগবাজি খেয়ে নিলো। - তুমি সকালে কি খেয়েছো? - ডাল দিয়ে রুটি- বলেই ছেলেটি আমার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হবার আগেই ওখান থেকে সরে গেলো। আবার সে বন্ধুদের সাথে চ্যাংদোলা খেলতে খেলতে নদীর পাড়ের ঢিবি হতে একটা এক্রোব্যাটিক ঝাঁপ দিয়ে নদীর শান্ত ধারার পানিতে উল্টিয়ে পড়লো। ...

কঠোর লকডাউন

কঠোর লকডাউন  মো: এনামুল হক  "মা আপনার বাড়ি কোথায়?" বলতেই মা বয়সী বৃদ্ধা লোকটি পেছন ফিরে চোখ ছলছল করে আমাদের দিকে তাকালো। -ঐ নদীর ধারে! এ কথাটি বলতে বলতে নিজেকে সামলে নিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় কুঞ্চির লাঠির উপর ভর করে নড়বড়ে ভঙ্গিতে দাঁড়ালেন বৃদ্ধা মা। হয়তো এক পেট ভাতের জন্য এই বৃষ্টি ভেজা বিকালেও উনি দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। -আপনার ভোটার আইডিটা নিয়ে আইসেন তো মা। আপনার নামে কিছু খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখবো ইনশাল্লাহ। এই পথেই প্রতি দিন আমরা অফিসে যাই। আপনি আগামীকাল সকালে আইডি কার্ডটা আমাদের হাতে দিতে পারবেন? কৃতজ্ঞতার আধিক্যে ভারি ভারি কণ্ঠে বুঁদ হয়ে বৃদ্ধ মা বললেন, কেন পারব না বাজান। আমি ঠিক নিয়াসপানে আর এই মোড়েই বসে থাকপানে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চাতুর্যতায় একই ছাতার তলে আমিও আমার ম্যানেজার সারের সাথেই ছিলাম আর সামান্য সাহায্যের আশ্বাসে শীতল চক্ষুর উচ্ছলতাকে খুব কাছ থেকে আপন মনে অবলোকন করছিলাম। এতো তো গেলো দৈবাত্ সামনে পাওয়া শুধু একটি অসহায় মায়ের প্রাত্যহিক জীবন-গল্প যা বাস্তবিক অভিজ্ঞতার খুব কাছ থেকে আচ করতে পারা। এরকম হাজারো অসহায় মা-বাবা বাংলার ঘরে ঘরে ...

বিড়ম্বনার এক দিন

বিড়ম্বনার এক দিন মোঃ এনামুল হক  ভোর ছটা বাজে। ডাইরেক্ট গাড়ি না থাকায় ভাবছি আজ কঠোর লকডাউনে লোকাল যানবাহনে ভেঙে ভেঙেই বাড়িতে যাব। ভোরের পাখির টাটকা কিচিরমিচির কুহুতানে আমার ঘুম ভাঙ্গার আগেই ম্যানেজার সার ও করিম সার একই বাইকে কুষ্টিয়া থেকে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন সেই সাত সকালে। তবে আমি ঝিনাইদহ যাব বলে রুম থেকে অন্যদের চাইতে পরে হলেও আমার চাইতে একটু আগেভাগেই বের হলাম। রাতে এনে রাখা দুটো কেক রুটি আর মাম বোতলের দু ঢোক পানি খেয়ে নিলাম। এরপর বেসিনে সাবান দিয়ে কোরোনার নিয়মে হাত-মুখ ধুলাম। এরপর আমার পরিচিত সেই কালো ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে রওনা দেবার জন্য রুমের দরজায় এসে দাঁড়ালাম। সারা রাতের ভারি বৃষ্টি ঘুমের গভীরতায় বিস্মৃত থাকলেও সকালের ঝিরিঝিরি ধারার ঘনফোটের বৃষ্টি আর রুমের সামনে জমে থাকা হাঁটু সমান পানি জানিয়ে দিল কি পরিমাণ বৃষ্টি সারারাত হয়েছে। সারা আকাশে মেঘের আস্তরণ যেন মহাকালের অবিরত চাকাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য থমকে দিয়েছে। দরজায় দাঁড়িয়ে বাড়িতে ফেলে আসা ছাতার বেখেয়াল চিন্তায় বৃথা সময় নষ্ট না করে মাথার উপর ব্যাগটা রেখেই ছোট্ট একটা দৌড়ে মেইন রাস্তার ধারে এক দোকানের ছাউনিতে জড়োসড়ো হয়...

কমফর্ট জোন

কমফর্ট জোন  মোঃ এনামুল হক  কখনো কখনো জীবন যখন বাধাগ্রস্ত হতে থাকে তখন আমরা মনে করি, জীবনটা আমার একদম আটকে গেল; এই জীবনে আমার আর কিছুই করা হবে না। আর যেখানে আটকে গেছি, সেখান থেকে কোন অ্যাডভান্সই যেন আর হচ্ছে না,কোন প্রগ্রেসই তো করতে পাচ্ছি না। জীবনে না ভালো কিছু হচ্ছে, না খুব বেশি খারাপ কিছু হচ্ছে। একবার এক রাজা অন্য রাজ্যে বেড়াতে গেল। সেখানকার রাজা তাকে খুবই মেহমানদারি করলো। রাজাকে সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলিতে প্রদর্শন করানো হলো। অনেক ঐতিহ্যময় খাবার-দাবারও তাঁকে খাওয়ানো হলো। অবশেষে রাজার যখন তাঁর রাজদরবারে ফিরে যাওয়ার সময় হলো তখন রাজা ওখানকার গ্রামবাসীদের কাছ থেকে দুইটা তোতাপাখি উপহার হিসেবে নিয়ে আসলো। এই দুইটা তোতাপাখি রাজার বাগানের ভিতর ছেড়ে দেওয়া হল। সেখানেও খাঁচা ছিল। উঁচু নীচু গাছও ছিলো। এরপর ভাষা বা উড়তে শেখার জন্য সেখানে একজন ট্রেইনারেরও ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু কিছু দিন পর দেখা গেলো, সেখানে একটা তোতা ভালো করে সবকিছু শিখতে পারল কিন্তু আরেকটা তোতাপাখি তেমন কিছুই ভালমতো শিখে উঠতে পারল না। অর্থাত্ তোতাটি খায়-দায়, ঘুরেফিরে আর শুধু একটি গাছের ডালে আরাম করে বসে থাকে। ...

মুয়াজ্জিন দুর্দশা

মুয়াজ্জিন দুর্দশা মোঃ এনামুল হক  আমি দেখেছি সব ক্ষেত্রে মানুষের বেতন বাড়ে। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলে যে সমস্ত মোয়াজ্জিন মসজিদে আজান দেন, তাদের সম্মানী কখনোই বাড়ে? বাড়ে না। বরং প্রকারান্তরে বা আপেক্ষিক ভাবে তা আরোও কমতে থাকে যা ভুক্তভোগীদিগকে খুবই প্যারা দেয়। আমার গ্রামের বাড়ির পাশেই একটা মসজিদ আছে। সেই মসজিদে একদা এক জীর্ণশীর্ণ রোগা মোয়াজ্জিন ছিল। উনি সম্পর্কে আমার নানা হন। সেই নানা সবসময় মসজিদের মেঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করতো; কিন্তু বয়সের ভারে সেটা আর সব সময় অতো সুচারুভাবে হয়ে উঠতো না। অথচ এই জিনিসটাই যখন ঐ এলাকার এক মধ্যবয়সী গোছের টিপটাপ বক-ধার্মিক লোকটা এসে দেখতো; তখন সে ঐ নানাকে কী তাড়ানোই না তাড়াতো। লোকটার এই তাড়নজাত ধ্বনির উত্স সম্ভবত, কালেভেদ্র জুমার দিন পাঁচ টাকা দান অথবা বছর অন্তে অনুরোধের ঢেকি গেলা স্বরূপ পাঁচ কেজি ধানের বনেদি অবদান। বিবেক- বিবেচনাহীন গাধার মত কর্কশ কণ্ঠে এমন তাড়ানো দেখে আমার মাঝে মধ্যে খুবই বিরক্ত লাগত। শুধু তাই নয়, চকচকে টাইলসের মেঝের কোনো এক কোণে হয়তো অদেখা অস্পষ্ট কোনো ধুলো দৈবাত্ তার চোখে এসে ধরা পড়েছে; আর অমনি তার ডিম পাড়া ম...

নষ্ট শৃঙ্খলায় ভ্রষ্ট সমাজ

নষ্ট শৃঙ্খলায় ভ্রষ্ট সমাজ মো: এনামুল হক  ধর্ষণ এখন আমাদের সমাজের খুব সাধারণ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মধ্যে নীতি নৈতিকতা দিন দিন যেন ডাইনোসরের মত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন আমাদের এই অবস্থা তা কি কখনও আমরা আচ করতে পাচ্ছি? সেদিন গ্রামে গিয়ে দেখি নদীর ধারে চার পাঁচ জন উঠতি বয়সের পোলাপান এন্ড্রয়েড মোবাইল হাতে পেয়ে গভীর মনোযোগের সাথে অতিশয় মগ্ন হয়ে কি যেন দেখছে আর হাসাহাসি করছে। অথচ আমি ওখানে উপস্থিত হবার পরও ওদের মধ্যে ঐ স্থান হতে উঠে যাবার কোনো প্রকার প্রবণতা তো পরিলিক্ষত হলোই না বরং সবার মধ্যে কেমন জানি একটা নির্লজ্জতার নোংরা ছাপ রীতিমতো ফুটে উঠল। কেননা মোবাইল কোম্পানির তিন বা চার দিনের বিশেষ ইন্টারনেট অফার ওদের যে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতেই হবে। এজন্য হয়ত ওরা মরিয়া হয়ে পর্ণ্য সাইট থেকে শুরু করে এমন কোনো সাইট নেই যে সেখানে অবাধে ঢোকার নিরব স্বাধীনতা তারা লাভ করেনি। আমাদের সময় এমন বিকেল গুলো ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা ধরণের শরীরচর্চামূলক খেলায় মাতিয়ে তুলেছি পাড়ার সকল বন্ধুরা মিলে। অথচ কি আশ্চর্য !চোখের সামনেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এভাবে এখানে ওখানে একাক রকমের আসক্তি নিয়ে ঝিম মের...

করোনা উপলব্ধি

করোনা উপলব্ধি  মো: এনামুল হক  বিশ্বজোড়া আতঙ্কময় করনার ভয়ে আজ আমরা সবাই মিলে খোদার কাছে কতই না কাকুতি মিনতি করছি। ক্রন্দনে আর আস্ফালনে একাকার করে দিচ্ছি এ উপাসানালয় হতে ও উপাসানালয়, এগৃহ হতে ওগৃহ, এদেশ থেকে ওদেশ, এমহাদেশ থেকে ও মহাদেশ। মুক্তির জন্য কত আহাজারি কত হাহাকার সেখানে। কিন্তু মৃত্যু তালিকায় সেখানে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। এ মহামারি হতে রক্ষা পেতে নানা প্রচেষ্টায় হয়রান হয়ে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে তাবৎ সব হুমড়োচুমড়ো চিকিৎসা বিজ্ঞানী, ডাক্তার, নার্স, ধর্মগুরু আর রাজনীতিবিদেরা। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের দু হাতের কামায়ের বিপরীতে তাঁর নির্ধারিত ফায়সালা আমাদের মেনে নিতেই হবে। পরম করুনাময় সেই প্রভু হয়তো তাঁর রহমতের অসীম ভান্ডারের অছিলায় আবারো আমাদের সব পাপ পঙ্কিলতা নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন। তাঁর কুদরতি ক্ষমতায় নিমিষেই স্তব্ধ করে দিবেন এই ক্রমবর্ধমান ভয়াল মরণ মিছিল। কারণ আল্লাহর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মতের  উপর মুছিবাত বা গজব কখনও স্থায়ী হয়নি এবং তা হতে পারে না। কিন্তু তাঁর নানা গায়েবী অছিলায় এই মৃত্যু পুরী সজীব হবার পর আমরা স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে আবার যেন সেই...

ঈদ আর নয় মহা-বিচ্ছেদ

ঈদ আর নয় মহা-বিচ্ছেদ  মোঃ এনামুল হক  পরিচিত ভায়ের শীর্ণ ভ্যানের পিছনে বসে ভাঙাচুরা রাস্তার খড়বড়ে কাপুনির তরঙ্গে আর বাতাসের শো শো শব্দের মিষ্ট আওয়াজের সাথে সামনের দুই যাত্রির অস্পষ্ট কথোপকথনে পিছনে বসা লোকটার কানে ভেসে আসলো,“ মালা দিয়ে কি সুমুদ্দুর ছেকা যায়?” আঞ্চলিক ভাষায় নারিকেলের ভিতরের শক্ত খোলসের অংশকে ‘মালা’ বলে আমাদের অঞ্চলে। কৌতুহলবশত, খুব কষ্টের মাধ্যমে আলোচনার বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করে অবশেষে লোকটা বুঝতে পারলো ভ্যানের সামনে বসা লোক দুইটা পদ্মা সেতুর নিগুড় তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করছে।উপদ্রবের মত পেছনের লোকটি তখন আবার মুখ ফোঁসকে বলে ফেললো, “আপনারা যেকোন কিছুর উন্নয়ন নিয়ে সবসময় আমাদের দেশের বিরোধী দলের মত শুধু বিরোধীতার জন্যই বিরোধিতা করেন কেন,যা হচ্ছে হোক না। আমরা তো এই পাড়েরই লোক...এই পাড়েই আমাদের বসবাস,ব্রিজটি হলে ক্ষতি কি...বরং উপকার তো আমাদেরও । ব্রিজটি দিয়ে শুধু তো সরকার দলের লোকেরাই যাবে না, ওটা দিয়ে তো আমরা  সবাই যাতায়াত করবো। ভাবটা এমন যে ওটা না হলেই যেন কারো কারো চোখে মুখে ঈদের খুশির অবারিত ঝলকানি রীতিমত ফুটে ওঠে।”স্বমতের বিরুদ্ধ মতবাদের অযাচিত সুর শুনে খ...

সন্তানের মূল্যবোধ ও আমরা!

সন্তানের মূল্যবোধ ও আমরা! মো: এনামুল হক আপনাদের সাথে একটা জিনিস আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে শেয়ার করতে চাই। আর সেটা হলো, আমরা আমাদের নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে নিয়ে যাতে খুব ভালমত চিন্তা করতে পারি। আর সেই সাথে ইসলাম যেন আমাদের সকলের জীবনে খুবই সচেতনতার একটা ব্যাপার হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমার উপর রাগ বা অভিমান হলেও, আজকে থেকে আপনি অন্তত কিছু একটা শুরু করুন। আর একদম কিছুই যদি আপনি না করেন; তাহলে সেটা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য খুবই একটা চিন্তার বিষয় হবে। প্রত্যেকটি বাচ্চা যারা সৃষ্টি, স্রষ্টা বিভিন্ন বিষয়ে সন্দেহ করা শুরু করে অথবা যারা আল্লাহর কালেমা থেকে ভিডিও গেমস নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। তাহলে এটা আমাদেরই বিশাল একটা ক্ষতি এবং চিন্তার বিষয়। আপনাদেরকে আমি যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে, মূর্তি বা আইডল। ইব্রাহিম (আ:) মূর্তি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। আমাদের সেই সমস্যা নেই। আমাদের এখানে মূর্তি নেই। সেই কোর্স নেই। আর আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত না যে, আমাদের সন্তানরা কোন মূর্তি পূজা করবে। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে, আসলে আইডলটা কি? প্রত্যেক প্রজন্মের একটা নিজস্ব আইডল আছে। প্রত্যেকটা সময়ের একটা নিজস্ব...

শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি ও মন্দির

শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি ও মন্দির মোঃ এনামুল হক  পুণ্যভূমি বলে পরিচিত জেলা সিলেট। বিভিন্ন সময় এখানে আবির্ভাব ঘটেছে মহাপুরুষদের। মুসলিম সুফি-সাধকের পাশাপাশি সনাতন ধর্মালম্বী মহাপুরুষদের আগমন ও বসবাস ছিল এখানে। বিশ্বদরবারে তাই এ জেলার রয়েছে আলাদা খ্যাতি। ধর্মপ্রচারকদের স্মৃতির শহর দেখতে এখনো ছুটে আসেন পর্যটক ও লেখক। শহর ঘিরে লেখেন ভ্রমণকাহিনি। তুলে ধরেন ইতিহাস-ঐতিহ্য। পুণ্যভূমি সিলেটের সেই ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি গোলাপগঞ্জ উপজেলার শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পৈতৃক বাড়ি। উপমহাদেশের বৈষ্ণব ধর্মের সাধক ও সংস্কারকের এ বাড়ি এতদিন চরম অবহেলা আর অযত্নে জীর্ণদশায় পড়ে থাকলেও এখন সেখানে সিলেট জেলা পরিষদের প্রচেষ্টায় নেওয়া হয়েছে সংস্কারের নানা উদ্যোগ। এ বাড়িটি ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের মিশ্রপাড়া গ্রামে অবস্থিত। ইতিহাস বলছে, অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে তৎকালীন সিলেটের দেওয়ান গোলাব রামের উদ্যোগে গোলাপগঞ্জে মন্দির নির্মিত হয়। জানা যায়, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর বাবা জগন্নাথ মিশ্র যখন শ্রীহট্ট ছেড়ে নবদ্বীপে চলে যান, তখন মহাপ্রভুর জন্ম হয়নি। সে সময়ই তার ঠাকুরমা আবদার করেছিলেন যেন নাতি তাকে দেখতে আসে। ১৪৮৬ সালে জন্ম নেন শ্রী...

পুণ্যভূমি সিলেটের মাজার

পুণ্যভূমি সিলেটের মাজার  মোঃ এনামুল হক  হুমায়ূন চত্বর থেকে সিএনজিতে ত্রিশ টাকা ভাড়ায় সোজা পৌঁছে গেলাম হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার আম্বরখানায়। সেখানে মেইন রোড ছেড়ে পশ্চিম বরাবর রাস্তায় মিনিট খানেক হাঁটতেই সামনে দেখি বড় একটা গেট। ভাবসাব দেখে ঐটাই আমার কাছে সেই কাঙ্খিত মাজার বলে মনে হলো। তারপরও কনফার্ম হওয়ার জন্য স্থানীয় এক দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, "ভাইজান, এটাই কি সেই হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার?" উনি বললেন, "হ্যাঁ, প্রবেশ দরজা দিয়ে প্রবেশ করুন।" এরপর আমি ভিতরে ঢোকার পর একটু ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছি আর মনে মনে মূল মাজারটাকেই খোঁজ করছি। কিন্তু কাউকে বলছিনা। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে একসময় মাজার প্রাঙ্গণের পূর্বপাশে গিয়ে দেখি অসংখ্য কবুতরের মুহুর্মুহু আনাগোনা। ওগুলো ঝপ ঝপ করে নিচে নেমে আসছে স্টিলের বেড়ায় নির্মিত এক উন্মুক্ত খাঁচার ভিতরে। পাশেই একটা দোতলা বিল্ডিং। সেই বিল্ডিংয়ের ছাদে এবং ভেন্টিলেটার বরাবর অগনিত কবুতরের আনাগোনা। যাইহোক, এখানকার মুগ্ধতা শেষ না হতেই আরেকটু সামনে চোখ গেল আমার। সেখানে দেখি আরেকটা জটলা। ঐ জটলার জট খুলতে সামনে এগোলে আমিও আটকে যাই ...

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে মোঃ এনামুল হক  বড়লেখা হচ্ছে মৌলভীবাজারের একটা উপজেলা। সেখান থেকে সিএনজি যোগে আমি কাঠালতলী গেলাম। উদ্দেশ্য মাধবকুণ্ডে জলপ্রপাতের দৃশ্যে চোখ জুড়াবো। তাই কাঠালতলী থেকে একটা সিএনজি রিজার্ভ করে মাধবকুণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তবে জলপ্রপাতের দৃশ্যে বিমোহিত হবার পূর্বেই পথিমধ্যে টিলার দুইপাশের সৌন্দর্যের অপার ফল্গুধারা যেন আপন মমতায় খেলা করে বেড়াচ্ছে। সেইসাথে টিলার পাদদেশে সমতল ভূমির ঐ বৈচিত্র্যময় রূপের দীপ্তিময় সৌন্দর্যই বা কম কিসে যায়? সেখানে ভরাট সবুজের দারাজ সমারোহ যেন আমার চোখের জ্যোতিকে দ্বিগুন উজ্জ্বল করে চলেছে। খানিক দূরের ঐ লাল গাভীটা নিবিড় সবুজ ঘাসের আস্তরণে তার তেল চুয়ানো দেহের প্রায় অর্ধেকটাই ডুবিয়ে দিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে এমনভাবে ঘাস চর্বণ করছে যা দেখে মনে হচ্ছে বাইরের জগতের কে বা কারা তার সৌন্দর্যের মোহে পড়ে আনন্দে লুটোপুটি খাচ্ছে সেদিকে তার যে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অবশেষে পৌছে গেলাম সেই কাঙ্খিত মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের গেটে। বিশ টাকার টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকতেই নানা সৌন্দর্যের হাতছানি। এরপর এপাশ ওপাশ তাকাতে তাকাতে চলে গেলাম ঠিক জলপ্রপাতের কাছে। সেখানে সুউচ্...

রহস্যময় জাফলং

রহস্যময় জাফলং মোঃ এনামুল হক  জাফলং মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠা ঝর্ণা, নদী, পাহাড় আর পাথর- বালির আস্তরণ। তাই সুদূর সেই আস্তরণে পাড়ি জমাতে আমি বন্ধু আলীর নির্দেশনায় হুমায়ুন চত্বর, সিলেট হতে সোজা গিয়ে নামলাম জাফলং জিরো পয়েন্টের নিকটবর্তী সংগ্রাম ফাঁড়ি বিজিবি ক্যাম্পের পাশে। ওখানে যেতে বিরতিহীন গাড়িতে আমার নব্বই টাকা ভাড়া গুনতে হল। যাইহোক, ওখান থেকে নেমে আমি লোকের কাছে শুনতে শুনতে জাফলং এর মাতৃভূমি গুচ্ছ গ্রামে প্রায় হেঁটেই চলে আসলাম। প্রথমে বাংলাদেশের প্রান্তের টিলার উপর দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিস্তীর্ণ পাহাড় সবুজ পোশাকে আচ্ছাদিত হ্য়ে মহীরূহের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। আর ঐ পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ভারতের খাসিয়া, মনিপুরী উপজাতিরা এত চমত্কার কারুকার্যের সুন্দর অবয়বে পাকা, আধাপাকা বাড়ি করে রেখেছে যা চর্ম চোক্ষে না দেখলে বোঝা বড় দায়। এরপর হঠাৎ চোখে পড়ল সবুজ পাহাড়ের গা ঘেঁষে লম্বা আকৃতির সাদা রংয়ের কি যেন একটা সাপের মত এঁকেবেঁকে নিচে নেমে আসছে। দূর থেকে প্রথম দর্শনে ভাবলাম ওগুলো হয়তো বালি পূর্ণ সাদা বস্তা দিয়ে কেউ হয়ত পাহাড়ে ওঠার সিঁড়ি বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু না। ...