নষ্ট শৃঙ্খলায় ভ্রষ্ট সমাজ
নষ্ট শৃঙ্খলায় ভ্রষ্ট সমাজ
মো: এনামুল হক
ধর্ষণ এখন আমাদের সমাজের খুব সাধারণ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মধ্যে নীতি নৈতিকতা দিন দিন যেন ডাইনোসরের মত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন আমাদের এই অবস্থা তা কি কখনও আমরা আচ করতে পাচ্ছি? সেদিন গ্রামে গিয়ে দেখি নদীর ধারে চার পাঁচ জন উঠতি বয়সের পোলাপান এন্ড্রয়েড মোবাইল হাতে পেয়ে গভীর মনোযোগের সাথে অতিশয় মগ্ন হয়ে কি যেন দেখছে আর হাসাহাসি করছে। অথচ আমি ওখানে উপস্থিত হবার পরও ওদের মধ্যে ঐ স্থান হতে উঠে যাবার কোনো প্রকার প্রবণতা তো পরিলিক্ষত হলোই না বরং সবার মধ্যে কেমন জানি একটা নির্লজ্জতার নোংরা ছাপ রীতিমতো ফুটে উঠল। কেননা মোবাইল কোম্পানির তিন বা চার দিনের বিশেষ ইন্টারনেট অফার ওদের যে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতেই হবে। এজন্য হয়ত ওরা মরিয়া হয়ে পর্ণ্য সাইট থেকে শুরু করে এমন কোনো সাইট নেই যে সেখানে অবাধে ঢোকার নিরব স্বাধীনতা তারা লাভ করেনি। আমাদের সময় এমন বিকেল গুলো ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা ধরণের শরীরচর্চামূলক খেলায় মাতিয়ে তুলেছি পাড়ার সকল বন্ধুরা মিলে। অথচ কি আশ্চর্য !চোখের সামনেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এভাবে এখানে ওখানে একাক রকমের আসক্তি নিয়ে ঝিম মেরে পড়ে আছে কি ভয়ঙ্কর অবচেতন ভঙ্গিমায় ! কেউ গাঁজার আড্ডায়, কেউ তাসের আড্ডায় আবার কেউবা অপরিণত বয়সে ইন্টারনেট নামক ভয়ঙ্কর আড্ডাখানায় জোঁকের মত আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে। অতঃপর এরা এসমস্ত অশ্লীল বা অনৈতিক কিছুতে আসক্তির পর এদের অপরিপক্ষ মানুষিকতার নেতিবাচক গতিটা থাকে চরমে। ফলে ওরা তখন পরবর্তীতে তাদের ঐসব চক্ষুগোচর হওয়া অযাচিত বিষয়গুলো বাস্ততে প্রয়োগের ব্যাপারে অতিশয় উন্মাদ পশুর মতো উদগ্রীব হয়ে সমাজের যত্রতত্র সবেগে ছুটতে থাকে। তখন এদের কাছে কোথায় মা বাবার সামাজিক সম্মান, কি বহুযুগ চর্চিত সমাজের অদৃশ্য ইতিবাচক নিয়ম-নীতি অথবা স্বধর্মে দীক্ষিত হবার অনিন্দ্য অনুশাসন, কোন কিছুই যেন মনের কোণে ঢেউ খেলার সাহস পায় না। মনের ভাবনাকাশে একটা জিনিসই শুধু জেগে ওঠে আর তা হল কিভাবে ঐ ঘৃণ্য আর হীন মানসিকতা সম্পন্ন কর্মকাণ্ড চরিতার্থ করতে হবে সেই চিন্তার ঘুরপাকেই ওরা সবসময় বিভোর থাকে। এই তো গেল অপসংস্কৃতিতে আসক্ত উঠতি বয়সের অবুঝ পোলাপানের কথা, আর বিবেক ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন অন্যান্য হুমড়ো-চুমড়োরা? মাঝে মাঝে সমাজের দর্পণ নামে খ্যাত অতিশয় ভদ্র মধ্য বয়সী মানুষের কর্মকান্ড দেখলেও তো গা রীতিমতো শিহরে ওঠে। এদের দ্বারা আবার পাঁচ-ছয় বছর বয়সের মেয়ে-ছেলে ধর্ষিত হবার বিব্রতকর খবরও হরহামেশায় শোনা যায়। তাহলে কি ধরে নেব আমরা আস্তে আস্তে অসভ্য বর্বর যুগের একেবারে নিম্ন স্তরের দিকেই ধাবিত হচ্ছি? নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি মানুষের প্রবল আকর্ষণ কিন্তু সৃষ্টির সেই সূচনালগ্ন হতেই পরিলিক্ষত হয়ে আসছে। আর সেটা আমাদের শয়তানের কুমন্ত্রণাই বলি অথবা কুরিপুর অনর্গল প্ররোচনার প্রভাবেই হচ্ছে বলে মনে করি, সেটা কিন্তু সদা অতন্দ্র প্রহরীর মত আমাদের সমাজে চির বহমান হয়েই আছে। তাহলে আমাদের এ অনৈশলামিক কর্মকাণ্ড গুলা নিয়ন্ত্রণের উপায়টা আসলে কি ? যুগে যুগে এই মানব সমাজে আমরা মানুষের হেদায়েতের জন্য বিভিন্ন মনীষী বা ধর্ম যাযকের আবির্ভাব লক্ষ করে থাকি। এরা কু-রিপুর নানা ঐন্দ্রজালিক প্রভাব থেকে মানুষকে বাচানোর অন্তিম প্রচেষ্টায় নানা কর্মপদ্ধতি আর নীতি - নৈতিকতার দর্শন বাতলে থাকে। কেউ সেগুলো ধ্রুব তারার মত সত্য মেনে জীবন পরিচালনা করে থাকে আবার কেহ নিজের মনের কাছে যেটা ভালো মনে করে সেটা করেই জীবনে পরম আত্মতৃপ্তি লাভ করতে চায়। কিন্তু মনে যা চায় তা অনুসারে জীবন চালনা করতে গেলেই তো যতসব বিপত্তি বেঁধে যায়। কেননা এতে তো সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা কোনো ভাবেই সম্ভবপর থাকে না। কারণ সাপের জন্য যা খাদ্য গ্রহণ ইঁদুরের জন্য তা যন্ত্রণাদায়ক মরণ। অতএব দেখা যাচ্ছে আমরা যতই প্রজ্ঞা বা জ্ঞান সম্পন্ন হয়না কেন কি যেন এক অজ্ঞাত প্ররোচনায় আমরা প্রভাবিত হয়েই থাকি। কিন্তু এভাবে তো এতবড় একটা মানব সমাজ দোদুল্যমান অবস্থাই কোন ক্রমেই চলতে পারে না ! কোন না কোন নিয়মের আওতায় তাকে তো আসতে হবেই। আর এজন্যই দেশে দেশে, যুগে যুগে নানা আইন-কানুন অথবা অজস্র নিয়ম-নীতি ব্যাপকভাবে প্রণয়নের ব্যাপার-স্যাপারও আমরা লক্ষ করে থাকি। কিন্তু অধুনা বিশ্ব তথা আমাদের সমাজে এসব কোন কিছুরই প্রয়োগ যেন স্থায়ী বা টেকসই সমাধানের শক্তি হিসেবে কাজে দিচ্ছে না। তবে কিভাবে এই সমাজকে সুচারুভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধতার আওতায় আনয়ন করা যায় ? যারা ধর্ম বা অন্য যেকোনো ভিত্তির উপর বয়ান-বক্তৃতা দিয়ে এই দৈন্য সমাজকে শৃঙ্খলায় আনবে তাদের অধিকাংশই আজ কু-রিপুর চর্চা পরিত্যাগে বদ্ধপরিকর হতে পারছে না। এমনকি আজ ইতিবাচক তাড়নার নির্যাস থেকে ইন্টারনেট আবিষ্কার হলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্মমভাবে কেড়ে নিয়েছে মানুষের নিজ ধর্মগ্রন্থসহ অন্যান্য ইতিবাচক গ্রন্থের জ্ঞান আহরণের চরম আগ্রহ। উপরন্তু মনুষ্য নির্মিত আইন-কানুনের নানা ফাঁক-ফোকর থাকায় মানুষ সেখানে নানা ফন্দি ফিকির করে সেটা দিয়ে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই এহজাগতিক ঠুনকো ক্ষমতা বলে যার যখন যেটাতে সুবিধা হচ্ছে সে মোতাবেক আইন-কানুন তৈরি করে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার প্লাটফর্ম বানিয়ে নিচ্ছে। ফলে সব শ্রেণীর সমন্বয়হীনতার অভাবে তৈরি হচ্ছে নানা অভাবনীয় জটিলতা। প্রসংঙ্গক্রমে এই ফাঁক-ফোকর থেকে বের হবার আশ্বাসে সাময়িক প্রভাবশালী অভিভাকক বা নেতার অনৈতিক আদেশে তৈরি হচ্ছে নানা ক্যাটাগরির অসংখ্য নয়ন বন্ড এবং সেই বন্ড প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে প্রতীকী স্বরূপ দাড়িয়ে যাচ্ছে শালিনতা বিবর্জিত নানান মিন্নি জাতের মেয়েছেলে। তাই মনুষ্যসৃষ্ট কোন নিয়ম-নীতি এক্ষেত্রে একেবারেই শাশ্বত বা চূড়ান্তভাবে কার্যকর বলে আমার অন্তত মনে হয় না ! কেননা সৃষ্টির স্রষ্টা বা কারিগরের সে অমোঘ দৃষ্টিভঙ্গিই জানে সৃষ্টির অন্তরাত্বায় উদয় হওয়া ইতিবাচক বা নেতিবাচক চাহিদার কোথায় কোন ধরনের ফাঁক-ফোকর আষ্টেপৃষ্টে ভাব জমিয়ে বসে আছে। এজন্যই এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, আমাদের কম্পিউটারের ভাইরাস যে প্রগ্রামার সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসেবে কোন এন্টিভাইরাস বিশেষভাবে কার্যকর তা ঐ সংশ্লিষ্ট প্রগ্রামারই ভালো জানেন বা বলতে পারেন। তাই বিশ্ব কারিগর তার সৃষ্টির সূক্ষ্ম ফাঁক ফোকরের চেতনা-ভাইরাসের অভ্যন্তরে কি এন্টিভাইরাস লাগবে তা পরম দক্ষতা এবং সুচারু রূপেই মানুষের মধ্যে প্রদান করে রেখেছেন আর এতে আপনি বিশ্বাস করেন আর নাইবা করেন এটাই চরম বাস্তবতা। দেখুন এই বিশাল বিশ্ব- প্রকৃতি যদি যা ইচ্ছা তাই করার অভিপ্রায়ে ব্যক্ত হতো তাহলে কিন্তু এটা সুনিশ্চিত যে এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড কোনোভাবেই এরকম সুন্দর- শৃঙ্খলিত থাকতে পারতো না। যদি এই পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র স্ব স্ব শক্তি বা স্বাধীনতার প্রভাবে একে অন্যের কক্ষপথ ব্যবহার করে অবাধে ঘোরাঘুরি শুরু করে দিতো তাহলে কেমন গোলমাল বেধে যেত তা সহজেই অনুমেয়। শুধু তাই নয়, আপনার-আমার শরীরের দিকে একটু লক্ষ করি, সেখানে তারও কিছু চিরন্তন নিয়ম-নীতি আছে। তার সফ্টওয়্যার নামক আত্মায় ঘুম আছে, আহার আছে, হাসি আছে, কান্না আছে,যৌনানুভূতি আছে ইত্যাদি। আর এগুলা সেথায় না থাকলে বা চর্চিত না হলে আপনার জীবনে কখনই শান্তি বা শৃঙ্খলা সাবলীলভাবে ধরা দিত না। দেহের যে অঙ্গের যে অনুভূতি সে সেটা করেই তৃপ্তি লাভ করবে এটাই পরম সত্য এবং স্বাভাবিক। জিহ্বার বিচিত্র স্বাদ যেমন কানে স্পর্শ করলে পাওয়া যাবে না, তেমনি আবার যৌনাঙ্গ দিয়ে তিতা কি মিষ্টি অনুভব করা কোনো ভাবেই সম্ভব না। এতো জানা গেল আমাদের দেহ সফটওয়্যারের সূক্ষ্ম অনুভূতির কথা। আবার হার্ডওয়্যার খ্যাত আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের অবস্থান যার যেখানে থাকার কথা সেটা যদি সেখানে না থাকে তাহলে তাকে কেমন অদ্ভূত বা বিশ্রী দেখাবে তা সহজেই অনুমেয়। চোখ যদি কপালে না থেকে হাটুতে থাকত অথবা যৌনাঙ্গ ঢাকার মত অবস্থানে না থেকে যদি কপালে থাকত তাহলে মানুষ হিসেবে আমাদের কি না অদ্ভূত দেখাতো তা একটু বোধশক্তি থাকলেই বোঝা যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ বলেন, গড বলেন, ভগবান বলেন অথবা প্রকৃতি বলেন যে যায় বলেন না কেন কেউ না কেই এই চরম শৃঙ্খলা সন্তর্পণে বজায় রেখে চলেছে। অর্থাৎ যার যার কক্ষপথে সেই সেই অবস্থান করলেই কেবল শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকছে। তেমনি চিরন্তন সুখানুভূতি প্রকৃতির অমোঘ দান যৌনাচার যার যার কক্ষপথে চর্চিত হলেই কেবল শৃঙ্খলিত সমাজ ব্যবস্থা চরিতার্থ করা সম্ভব হয়। বিকৃত কোন বাসনা পূরন করতে গেলেই সেখানে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আর মাঝেমধ্যে সেই পরম সত্যের শিক্ষা সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির মাঝেই নানা উদাহরণ প্রয়োগ করে আমাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। কেননা বাতাস যখন স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হয় তখন সবকিছুই সুন্দর-স্নিগ্ধ থাকে, কিন্তু সে যখন উন্মত্ত অবস্থায় প্রলয়ঙ্কর ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস রূপে আবির্ভূত হয় বা বিচরণন করে তখন আর কোন কিছুই স্বাভাবিক থাকে না। সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়। এই এক্সট্রিমিজমের অসংখ্য নজির সেই মহান সৃষ্টিকর্তা এই সৃষ্টির মাঝে তিনি দিয়ে রেখেছেন। আগ্নেয়গিরির অস্বাভাবিক অগ্ন্যুত্পাতে সবকিছুই ভষ্ম হয়ে যায়, পৃথিবীর যে খণ্ড অত্যধিক ঠাণ্ডা বা গরম অধ্যুষিত সে অঞ্চলে মানুষ বসবাসের অনুপযোগী। এই অসামঞ্জস্যতা এবং তাঁর মহানুভবতা বোঝেতে যুগে যুগে এই মহাবিশ্বে তিনি যে কতকিছুর আয়োজনই না করে রেখেছেন তা আশপাশের প্রকৃতিতে একটু চোখ বোলালেই বোঝা যায়। আমরা আরবে আই-আমে-জাহিলিয়াতের বর্বর যুগের কথা প্রায় সবাই জানি। ঐ যুগে সেই সমাজকে তথা সারা জাহানের সকল মানুষকে শৃঙ্খলিত করতে এক মহা মানব হযরত মহাম্মদ (স) এর আগমন ঘটেছিল। অকথ্য নির্যাতন, লাঞ্ছনা আর পরম সহিঞ্চুতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিনিময়ে শৃঙ্খলিত সেই সমাজ আজ সঠিক এন্টিভাইরাস প্রয়োগের অভাবে আমাদের সামনেই আবারও চরম বিশৃঙ্খলায় পর্যবসিত হতে চলেছে। কেননা মহাগ্রন্থের অমর-অমিয় বার্তা আর মহাপুরুষের সেই আদর্শ অনুশাসন আজ মুখোশধারী ভদ্র সমাজের অনেকাংশেই নানা অজুহাতে নিজেদের মধ্যে ধারন করে না বা করতে চায় না। যার ফলে অধুনা বিলাসবহুল চাকচিক্যময় উগ্র বিশ্ব সমাজের আজ চরম দূরাবস্থা পরিলিক্ষত হচ্ছে। কেননা প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ করলে তার চরম বিপর্যয় যে সুনিশ্চিত এটা অবধারিত। সেটা জানা সত্ত্বেও, কেন জানি আমরা চাচ্ছি না যে, পৃথিবী নামক গ্রহটা তার স্নিগ্ধ, সুন্দর আর মহাসবুজের চিরহরিত্ বলয় নিয়ে সৌরজগতের সদস্য হিসেবে আরো কিছু দিন বেঁচে থাকুক আমাদের নিয়ে। নানান দূষণ আর পঙ্কিলতার চাপে তাকে আমরা মহা-ধ্বংসের অন্তিম কিনারে অসহায়ের মতো দাঁড় করাতে দ্বিধাবোধ করছি না। যাইহোক, ছোট বেলায় আমরা চলতি রাস্তায় যেকোনো শিক্ষককে দেখলেই সাইকেল থেকে তড়িঘড়ি করে নেমেই আগে সালাম দিতাম সম্মান জানাতাম।অথচ এখনকার ছেলেমেয়েদের অধিকাংশই সাইকেল থেকে নামা তো দূরে থাক সালামই ঠিকমতো দিতে চায় না। ইন্টারনেট বা আকাশ সংস্কৃতির দূর্বার ছোবলে প্রবলভাবে আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের এই যুবসমাজ। এই সংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে এদেরকে নিস্কৃতি দিতে না পারলে এই বলগাহীন সমাজের লাগাম টেনে ধরা একেবারেই অসম্ভব। আমাদের সময় অবসরে আমরা ছবি আকতাম, ফুটবল, ক্রিকেট খেলতাম, ঘুড়ি উড়াতাম, মা-বাবার হুকুমে মাঠে গরু ছাগল চরাতাম, সন্ধা-সকাল পড়তে বসা বাধ্যতামূলক মনে করতাম, ভোরে হুজরের কাছে আমপারা পড়তে যেতাম ইত্যাদি ইত্যাদি। আর একদিন বিকালে যদি কোনো কারণে মাঠে খেলতে না পারতাম তাহলে মনের ভিতর কেমন যে আকুপাকু করত তা বলে বোঝাবার মত নয়। এখন দূরন্ত শৈশবের সেই অবসর সময়টা কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা ফেসবুক, ইউটিউবের টিকটক ভিডিও আর বিভিন্ন পর্ণ্য সাইটে রমরমা দৃশ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার। ঘুমোতে যাবার আগে অথবা ঘুম থেকে উঠেই আমাদের ফেসবুকের ম্যাসেজ চেক না করলে যেন পেটের ভাত হজমই হয় না। বানরের হাতে খোন্তা দিলে যা হয় আরকি সেটাই আমাদের কপালে ঘটেছে। অর্থাত্, ধর্ষণ বলি,দূষণ বলি আর শাষণ যাই বলি না কেন প্রাকৃতিক নিয়মের মত না চলে যদি স্ব স্ব কক্ষপথ বিবর্জিত হয়ে অন্য পথে চলে, তবেই যতসব বিপত্তি অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য।
Comments
Post a Comment