শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি ও মন্দির

শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি ও মন্দির

মোঃ এনামুল হক 

পুণ্যভূমি বলে পরিচিত জেলা সিলেট। বিভিন্ন সময় এখানে আবির্ভাব ঘটেছে মহাপুরুষদের। মুসলিম সুফি-সাধকের পাশাপাশি সনাতন ধর্মালম্বী মহাপুরুষদের আগমন ও বসবাস ছিল এখানে। বিশ্বদরবারে তাই এ জেলার রয়েছে আলাদা খ্যাতি। ধর্মপ্রচারকদের স্মৃতির শহর দেখতে এখনো ছুটে আসেন পর্যটক ও লেখক। শহর ঘিরে লেখেন ভ্রমণকাহিনি। তুলে ধরেন ইতিহাস-ঐতিহ্য। পুণ্যভূমি সিলেটের সেই ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি গোলাপগঞ্জ উপজেলার শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পৈতৃক বাড়ি। উপমহাদেশের বৈষ্ণব ধর্মের সাধক ও সংস্কারকের এ বাড়ি এতদিন চরম অবহেলা আর অযত্নে জীর্ণদশায় পড়ে থাকলেও এখন সেখানে সিলেট জেলা পরিষদের প্রচেষ্টায় নেওয়া হয়েছে সংস্কারের নানা উদ্যোগ। এ বাড়িটি ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের মিশ্রপাড়া গ্রামে অবস্থিত।

ইতিহাস বলছে, অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে তৎকালীন সিলেটের দেওয়ান গোলাব রামের উদ্যোগে গোলাপগঞ্জে মন্দির নির্মিত হয়।

জানা যায়, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর বাবা জগন্নাথ মিশ্র যখন শ্রীহট্ট ছেড়ে নবদ্বীপে চলে যান, তখন মহাপ্রভুর জন্ম হয়নি। সে সময়ই তার ঠাকুরমা আবদার করেছিলেন যেন নাতি তাকে দেখতে আসে। ১৪৮৬ সালে জন্ম নেন শ্রী চৈতন্য। পরে তার বাবার কাছে করা আবদার পূরণে পৈতৃক ভিটায় আসেন তিনি। অবস্থান করেন দুদিন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাই এ স্থান তীর্থভূমি।

গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা সচ্চিদা নন্দ কৃষ্ণদাস মহাপ্রভুর পৈতৃক নিবাস ঘুরতে এসে খোলা কাগজকে বলেন, ‘পবিত্র স্থানটি সংস্কার করে মন্দিরের সেবা ও পূজার ভার বিচক্ষণ কাউকে দেওয়া উচিত বলে মনে করি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও দেশীয় ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ বিধায় এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের।’ এদিকে তাদের মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘শ্রীচৈতন্য জাদুঘর তৈরি করলে দেশ-বিদেশের অনেক ভক্ত-দর্শনার্থীর সমাগমের মাধ্যমে প্রচুর রাজস্ব আয়ও সম্ভব হবে।’ কুষ্টিয়া থেকে আসা নিত্যানন্দ দাস নামে আরেক ভক্ত জানান, শুনেছি এ ধামের অনেক সম্পত্তি ছিল। এখানে এসে এর সিকিটুকুও চোখে পড়ছে না। চারদিকে জবর-দখলদারদের কবলে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখনো যা আছে তা সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পর্যটকদের মন কাড়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্বে বড় ভূমিকা রাখবে। ধামোদর মাস উপলক্ষে মন্দিরে আসা কমল চক্রবর্তী বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত, প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছরের পুরনো এ ধামের ঐতিহ্য রক্ষায় এগিয়ে আসা। এর সংস্কার করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিচালনা করা। তাহলে শুধু সিলেটবাসী নয়, সমস্ত বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অনুরঞ্জন দাস বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ উপজেলার পুরাকীর্তিগুলো রাজা গোলাব রায়ের আমলে যেভাবে ছিল, ঠিক সেভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।’

কীভাবে যাবেন : সিলেট থেকে গেটলক বাসে গোলাপগঞ্জ, ঢাকাদক্ষিণ বাজার, বাজারের ৪০০ মিটারের মধ্যে হেঁটে বা রিকশায় শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি ও মন্দিরে যাওয়া যায়।    

তথ্য: ইন্টারনেট।

Comments