কমফর্ট জোন

কমফর্ট জোন 

মোঃ এনামুল হক 


কখনো কখনো জীবন যখন বাধাগ্রস্ত হতে থাকে তখন আমরা মনে করি, জীবনটা আমার একদম আটকে গেল; এই জীবনে আমার আর কিছুই করা হবে না। আর যেখানে আটকে গেছি, সেখান থেকে কোন অ্যাডভান্সই যেন আর হচ্ছে না,কোন প্রগ্রেসই তো করতে পাচ্ছি না। জীবনে না ভালো কিছু হচ্ছে, না খুব বেশি খারাপ কিছু হচ্ছে। একবার এক রাজা অন্য রাজ্যে বেড়াতে গেল। সেখানকার রাজা তাকে খুবই মেহমানদারি করলো। রাজাকে সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলিতে প্রদর্শন করানো হলো। অনেক ঐতিহ্যময় খাবার-দাবারও তাঁকে খাওয়ানো হলো। অবশেষে রাজার যখন তাঁর রাজদরবারে ফিরে যাওয়ার সময় হলো তখন রাজা ওখানকার গ্রামবাসীদের কাছ থেকে দুইটা তোতাপাখি উপহার হিসেবে নিয়ে আসলো। এই দুইটা তোতাপাখি রাজার বাগানের ভিতর ছেড়ে দেওয়া হল। সেখানেও খাঁচা ছিল। উঁচু নীচু গাছও ছিলো। এরপর ভাষা বা উড়তে শেখার জন্য সেখানে একজন ট্রেইনারেরও ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু কিছু দিন পর দেখা গেলো, সেখানে একটা তোতা ভালো করে সবকিছু শিখতে পারল কিন্তু আরেকটা তোতাপাখি তেমন কিছুই ভালমতো শিখে উঠতে পারল না। অর্থাত্ তোতাটি খায়-দায়, ঘুরেফিরে আর শুধু একটি গাছের ডালে আরাম করে বসে থাকে। তাই আশানুরূপ ফল না পেয়ে রাজা তত্ক্ষণাত্ আরেকটা ট্রেইনারের ব্যবস্থা করতে বলল। সেটাও করা হলো। কিন্তু এই ট্রেইনারের বেলায়ও একই ফলাফল লক্ষ্য করা গেলো। এরপর রাজা একটু বিরক্ত হয়ে সাথে সাথে আদেশ করলেন, এবার গ্রাম থেকে একটা দক্ষ লোক আনো; যে পাখি সম্বন্ধে ভালো বোঝে বা জানে। এরপর গ্রাম থেকে একটা লোক নিয়ে আসা হল। এই ট্রেইনার আনার পরে দেখা গেলো, উড়তে না পারা তোতাটি এবার অনায়াসেই উড়তে শিখে গেল। এমনকি এখন সে অপর পাখির চাইতেও অনেক বেশি উপরে এবং জোরে উড়তে পারে। এতে রাজা অবাক হয়ে গেল! রাজা তাই একদিন তোতা দুইটির খোঁজ খবর নিতে গ্রামের সেই বালক ছেলেটার কাছে গেলো। তখন সেই অজ পাড়াগায়ের ছেলেটাকে দেখে রাজা বলল, তুমি কি এমন কাজ করলে যে, পাখিটা এত তাড়াতাড়ি তোমার দীক্ষায় উড়া শিখে গেল? তখন ছেলেটি বলল, আমি কিছুই করিনি মহারাজ! আমি শুধু একটি কাজ করেছি আর তা হলো, আপনার আদরের তোতাটি আরাম করে যে ডালটিতে সারাক্ষণ বসে থাকতো সেই ডালটিই শুধু আমি কেটে দিয়েছি। আর একারনেই আপনার তোতাটি উড়তে শিখে গেছে। সুতরাং, আমরা যখন কমফর্ট জোনে থাকি তখন আমরা ঐ পাখির মতোই উড়তে ভুলে যায়। এজন্য আমাকে আপনাকে এটা অবশ্যই ছাড়তে হবে। আমি যদি ভাবি দেশ, গ্রাম, অঞ্চল আমাকে নিয়ে গর্ব করুক, তাহলে অবশ্যই ওটাকে আমার ছাড়তে হবে। এ জীবনে বহুবার এরকম আমাদের জীবনে হয়। আমরা কমফর্ট জোনে বসে থাকি। আমরা রিস্ক নিতে চাই না। আমরা ভাবি, আমাদের জীবনে এমন একজন আসুক; আমাদের ডালপালা কয়টা কেটে দিক। তখন হয়তো আমরাও উড়তে শুরু করব। মনে রাখতে হবে, কম দুঃখে কিন্তু বিড়াল গাছে ওঠে না। আমরা আমাদের রোজকার জীবনে আটকে গেছি। আমরা হাই হুতাশ করছি, কিন্তু কমফর্ট জোন থেকে আমরা বের হচ্ছি না। যদি সফলতা চান; তাহলে বন্ধু কমফর্ট জোন থেকে আপনাকে বের হতেই হবে। সম্পূর্ণ আকাশ, সম্পূর্ণ বিশ্ব আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যদি আপনার স্বপ্ন হয় অনেক বড় বা জীবনে যদি কোনো উল্লেখযোগ্য কিছু করতে চান অথবা যদি চান গ্রাম, সমাজ, দেশ আপনার নিয়ে গর্ব করুক, তাহলে এখনই বন্ধু বেরিয়ে পড়ুন। নিজেকে পরিশ্রমের আগুনে ঢালুন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠা করুন। এরকম কখনোই ভাববে না যে, জীবনে কেউ কখনো এসে আপনার ডালপালা কেটে দিয়ে যাবে। তখন হয়তো আপনি উড়তে শিখবেন। জীবন তখন লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। কোন কূলকিনারা দেখতে পাবেন না। তখন আপনি ধাবিত হবেন এক মহা জীবনযুদ্ধে। 

আশা করছি, এই গল্পটি আপনাদের চিন্তা-চেতনা কে উন্নত করতে সাহায্য করবে।

Comments