দোয়া

 দোয়া 

মো: এনামুল হক 


আল্লাহ্কে যদি আমরা মনে মনে স্বরণ করি তিনিও আমাদেরকে মনে মনে স্বরণ করেন, মজলিসে করলে তিনিও মজলিসে স্বরণ করেন। তাঁর দিকে আমরা এক বিঘত অগ্রসর হলে তিনি এক হাত অগ্রসর হন, এভাবে আমরা এক হাত গেলে তিনি এক বাহু, আমরা হেঁটে গেলে তিনি দৌড়ে আসেন আমাদের উপকারে। তবে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই পূর্ণ আস্থা সহকারে দোয়া করতে হবে তাঁর কাছে। কারণ আল্লাহ্ অমনোযোগী ও অসাঢ় অন্তরের দুয়া কবুল করেন না। বিপদ আপদ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সব সময়ই আমাদেরকে দোয়া করতে হবে। পৃথিবীর মানুষের কাছে চাইলে অখুশি হয় আর পক্ষান্তরে আল্লাহর না চাইলে তিনি অসন্তুষ্ট হন। তাড়াহুড়ো না করে দুয়া কবুল হওয়ার প্রতীক্ষায় থাকতে হবে। সূরা ফাতিহা পুরা এবং সূরা বাকারার শেষাংশের যেকোনো হরফ পড়লে, তার মধ্যকার প্রার্থিত সব বিষয় আমাদেরকে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অন্যত্র আসছে, অধিক প্রিয় হল দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা চাওয়া। যে বিপদ এসেছে বা যা আসেনি তাতে দুয়ায় উপকার হয়। অহংকারে ইবাদত বিমুখ নিশ্চিত জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে ও গোপনে ডাকা উত্তম। কেননা, বান্দার দুয়ায় আল্লাহ্ কোনো রকম মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি সাড়া দিয়ে থাকেন। তাঁর কাছে ছোট বড় যেকোনো বিষয় যেমন, লবণ বা জুতার ফিতার জন্যও আমাদেরকে দোয়া করতে হবে। আল্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদায় অবনত হয়ে দোয়া হচ্ছে তাঁর কাছে অধিক প্রিয়। শেষ রাতের মধ্যভাগে ও ফজর নামাজের পরের দোয়া তিনি অধিক শ্রবণ করে থাকেন। কারো জন্য দোয়ার আগে প্রথমে নিজের জন্য দোয়া করার কথা বলা হয়েছে। আর তাঁর কাছে হাত তুললে তিনি শূণ্য হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। আমাদেরকে সত্ কাজে আদেশ ও অসত্ কাজে নিষেধ করতে হবে নতুবা দোয়া কবুল হবে না। সব উপযুক্ত দোয়াই কবুল হয়। তবে তা দুনিয়াতে কবুল হয় নচেত্ আখেরাতের জন্য সঞ্চিত থাকে অথবা তার দুয়ার সমপরিমাণ গুনাহ মাফ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পাপ করলে,আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে বা তড়িঘড়ি করলে দোয়া কবুল হয় না। আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (স:) এর উপর দূরুদ পাঠ করেই দোয়া শুরু করা উচিত। দোয়া ব্যতীত তকদীর রদ হয় না এবং সত্কাজ ব্যতীত আয়ু বৃদ্ধি পায় না। লা ইলাহা ইল্লাল্লা সর্বোত্তম যিকির এবং আলহামদুলিল্লাহ সর্বোত্তম দোয়া। মহানবী (সঃ) সর্বদা এ দুয়া করতেন, "ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুব, ছাব্বিত ক্বালবী আলা দ্বী-নিক (হে অন্তরসমূহ পরিবর্তনকারী,আমার অন্তরকে তোমার দ্বীপের উপর স্থির রাখ)।" "রব্বানা লা-তুযিগ্ কুলুবানা বা'দা ইয হাদায়তানা ....(হে আমাদের রব, আমাদেরকে সতপথে পরিচালিত করার পর তুমি আমাদের অন্তর সমূহে কে বিপথগামী করো না)।" "ইয়া হাইয়্যু , ইয়া ক্বাইয়্যুম, বিরাহমাতিকা আছতাগিছ-(হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী, আমি তোমার উছিলায় সাহায্য প্রার্থনা করছি)" যেকোনো কঠিন কাজে এই দোয়া করতে হবে। রুহু কণ্ঠাগত হওয়া পর্যন্ত আমাদের তওবা কবুল হয়ে থাকে। আমাদের তওবায় আল্লাহ্ যেন হারানো মাল ফিরে পাওয়ার মত আনন্দ পেয়ে থাকেন। আমরা গুনাহ করব সেটা প্রভু ভালো করেই জানেন। আর এ জন্যই বলা হয়েছে, আমরা গুনাহ না করলে, গুনাহ করার আরেক দল সৃষ্টি করতেন ও তিনি ক্ষমা করতেন। পিতা, মজলুম, মুছাফিরের দোয়া নিঃসেন্দহে কবুল হয়ে থাকে। বলা হয়েছে, পিতার দোয়া আল্লাহর নূরের পর্দা পর্যন্ত পৌছে। অন্যত্র বলা হয়েছে- রোজাদার যখন ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু'আ এবং মজলুমের দু'আ কখনও প্রত্যাখ্যাত হয় না। আল্লাহ্ তাঁর মর্যাদার শপথ নিয়ে বলেন- কিছু বিলম্ব হলেও আমাদের দোয়ায় তিনি অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন। আমাদের দোয়ায় অতিরঞ্জন করা যাবে না। শেষ রাতে আল্লাহ্ দুনিয়ার আসমানে আসেন। এমন দোয়া করবে না যে, তুমি চাও তো আমাকে ক্ষমা কর বা রহমত দাও বা নিশ্চিত হয়ে দোয়া। কারণ আল্লাহ্কে কোন কিছুতে বাধ্য করা যায় না। কুরানের কথা বেশি শুনিয়ে মানুষকে বিরক্ত, করবে না। দোয়ায় ছন্দবদ্ধ ভাষা পরিহার করা ভালো। নিজেকে,সন্তানকে বা ধনসম্পদকে কখনও অভিশাপ করবে না । কেননা বিশেষ মূহুর্তে সেগুলো কবুল হয়ে যায়। প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ (স:) এর শাফায়াত পাইতে হলে শিরকমুক্ত ইমান হতে হবে। আমাদের গুনাহের স্তূপ যদি আকাশের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়,এমনকি গোটা পৃথিবী ভরা গুনাহ নিয়ে গেলেও যদি আমরা শিরক না করি আল্লাহ্ আমাদের জন্য পৃথিবী ভরা ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হবেন। যেহেতু আমাদের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে কি লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে আমরা জানিনা, তাই সর্বদা উত্তম ধারণা ও উত্তম আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে হবে। আল কোরানে যে দু'আ গুলো বর্ণিত আছে তা আমাদের সর্বদা করতে হবে যেমন: আমরা যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হই, অনুগত মুসলিম হই, দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ পাই, জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাই, অসীম ধৈর্য ও মনোবলের অধিকারী হই, আমাদের কদমগুলো যেন অবিচলিত থাকে। আমরা যদি ভুলে যায় বা ভুল করি তার জন্য প্রভু যেন শাস্তি না দেয়,পূর্ববর্তীগণের মত গুরু দায়িত্ব যেন না দেয়, তিনি যেন আমাদের পাপ মোচন করেন এবং অভিভাবক হয়ে অপরাধকে ক্ষমা করেন ও দয়া করেন এবং জালিমদের এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে সাহায্যে করেন, তিনি যেন আমাদের সঠিক পথকে বাঁকা করে না দেয়, প্রতিশ্রুতিতে অটল আর মহাদাতা সেই রব যেন দয়ার ভাণ্ডার হতে রহমত দান করেন। কিয়ামতের দিন যেন আমরা অপমানিত না হই। মন্দ কাজগুলো আমাদের থেকে মুছে দেন এবং পূণ্যবানদের সাথে আমাদের মৃত্যু দান করেন ও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত না করেন। তিনি যেন কার্যে সীমালঙ্ঘন ক্ষমা করেন এবং নানা অসহায়ত্বে সাহায্য করেন। তাঁর কাছে সর্বদা উত্তম ও পবিত্র সন্তান চাই। আমরা যেন বলি, আমাকে ও আমার বংশধরদের তুমি নামাজ কায়েমকারী করো। সূরা আল ইমরানের 26-27 আয়াতের পুরা দু'আই আমরা করতে পারি-" হে আল্লাহ্! সমস্ত কর্তৃত্বের মালিক তুমি, যাকে ইচ্ছা তুমি ক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে ইচ্ছা তুমি ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি ইজ্জত দাও, যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করো; সমস্ত কল্যাণ তোমারই হাতে; নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তুমিই রাতকে দিনে রূপান্তরিত করো এবং দিনকে রূপান্তরিত করো রাতে; তুমি জীবন্তকে বের করে আনো মৃত থেকে এবং মৃতকে বের করে আনো জীবন্ত থেকে; আর যাকে ইচ্ছা তুমি রিযিক দান করো বেহিসাব।" জান্নাতের পথ প্রদর্শনকারী মহান আল্লাহ্ আমাদের হেদায়েত না দিলে হেদায়েত প্রাপ্ত হতাম না।শ্রেষ্ঠ মিমাংশাকারী আল্লাহ্ যেন আমরা এবং আমাদের জাতির মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দেয় এবং মহান রব যেন মুসলমানরূপে মৃত্যু দান করেন । এরা যা কিছু করছে তা থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে নাজাত দাও। বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো। আমি আমার রবের দিকে চললাম, তিনি অবশ্যই আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার সকল ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমি আমার অসহনীয় বেদনা,আমার দু:খ শুধু আল্লাহর নিকটই নিবেদন করছি। এ শহরকে তুমি নিরাপদ বানাও এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের মূর্তিপূজা থেকে রক্ষা করো। আমাকে তৌফিক দাও, আমি যেন তোমার অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যে অনুগ্রহ তুমি করেছো আমার প্রতি এবং আমার পিতামাতার প্রতি। আমাকে এমন ভালো কাজ করার তৌফিক দাও যাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে, আর আমার জন্য আমার সন্তানদের সত্ ও যোগ্য করে গড়ে তোল, আমি তোমার দিকে মুখ ফিরালাম এবং অবশ্যই আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ইয়া রব, আমার বংশধররা যেন নামাজ কায়েম করে, তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফল-ফলাদি দ্বারা তাদের রুযির ব্যবস্থা করো,যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তুমি সব জানো যা আমরা গোপন করি এবং প্রকাশ করি।আকাশ এবং পৃথিবীর কোন কিছুই তোমার কাছে গোপন থাকে না। তুমি তোমার বান্দাদের মধ্যে ঐসব বিষয়ে ফয়সালা করে দাও, যা নিয়ে তারা মতভেদ করছে। আশ্রয় চাচ্ছি সেসব অহংকারী ব্যক্তি থেকে যারা হিসাবের দিনের উপর ঈমান আনে না। তোমার ইচ্ছায় আমরা সবাই ধ্বংস হতে পারি; কিন্তু কিছু নির্বোধ লোকদের কর্মকাণ্ডের জন্য কি তুমি আমাদের সকলকে ধ্বংস করবে? এই পরিক্ষায় তুমি আমাদেরকে পথভ্রষ্ট না করে সতপথে পরিচালিত করো। তুমিই আমাদের অভিভাবক, তাই তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও, রহম করো এবং তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল। আর তুমি আমাদের জন্য এই পৃথিবীতে ও আখেরাতে কল্যাণ লিখে দাও, আমরা তোমার দিকেই পথ ধরলাম । হে আমাদের রব, তুমি তাদের সম্পদগুলো ধ্বংস করে দাও, তাদের হৃদয় কঠিন করে দাও, কেননা তারা কঠিন শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না। হে প্রতিপালক, তুমি আমাকে যেখানেই নেবে বা বের করে আনবে ,সত্যতা সহকারে নিয়ে যেয়ো বা বের করে নিয়ো আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে দাও একটি সাহায্যকারী কর্তৃপক্ষ। হে আমার রব, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে, মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে এবং তোমাকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থ হয়নি । আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের নিশ্চয়ই আমি ভয় করছি এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; সুতরাং তুমি আমাকে এমন একজন উত্তরাধিকারী দান করো যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে। তুমি আমার বুক প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও।আমার যবানের জড়তা দূর করে দাও, যাতে করে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। ইয়া রব, আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও যা হবে কল্যাণকর, আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী । হে আমার প্রতিপালক, তাদের যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা যদি তুমি আমার জীবদ্দশায় সংঘটিত করো,তবে তুমি আমাকে যালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না। জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের বাঁচাও; কারণ তার আযাব তো সর্বগ্রাসী আর আশ্রয়স্থল ও আবাস হিসেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা। আমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের সন্তানদের চক্ষু শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম। মরনে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই।আমাদের তো প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতেই হবে। আমরা আশা করি আমাদের প্রতিপালক আমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন, কেননা আমরা মুমিনদের মধ্যে অগ্রণী। শয়তান আমাকে খুব কষ্ট ও আযাবের মধ্যে ফেলেছে। তাই তুমি আমাকে প্রজ্ঞা এবং সুখ্যাতি দান করো যাতে সেদিন আমি বিশুদ্ধ হৃদয় নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হতে পারি। আমি আমার ব্যাপার আল্লাহর নিকট সমর্পণ করলাম, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। তুমি এমন আফসোসে ফেলো না যেখানে বলতে হয়, আমাকে আরও কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সদকা করতাম এবং সত্কর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

(বিঃদ্রঃ ভুল হলে মার্জনীয়।কোরান ও হাদিস থেকে নোট)

Comments

Popular posts from this blog

খুঁজে ফিরি সেই গ্রাম