সৃষ্টি নিয়ে আমার ভাবনা
সৃষ্টি নিয়ে আমার ভাবনা
মোঃ এনামুল হক
আমরা পৃথিবীতে অর্থের পিছনে এত ছোটাছুটি করি,অথচ আলটিমেটলি আমাদের এ্যাচিভমেন্টটা কি? আমরা শুধু অনর্থক এত কমপ্লেক্স লাইফ লিড করি । দেখুন বিলগেঁটস কত টাকা আয় করে ! কিন্তু সে কি তার সব টাকার উপযোগ ভোগ করে যেতে পারবে ! পারবে না । এক সময় না এক সময় তাঁকে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতেই হবে । তাহলে ভাবুন তো অন্তিমভাবে আমাদের এই পৃথিবিতে অর্জনটা কি? আমরা কেউ স্বপ্ন দেখি বাড়ি করব , গাড়ি করব, দামি দামি শাড়ি-গয়না কেনব । কিন্তু ভেবে দেখেছি কি- এগুলো ছেড়ে এক সময় সবাইকে আমাদের ওপারে পাড়ি জমাতে হবে! অর্থাৎ আমরা আমাদের সম্পদ সব ভোগ করে যেতে পারি না। তাহলে এ পৃথিবীতে আমাদের অর্জনটা কি? হ্যাঁ,অর্জন তো অবশ্যই আছে- তবে সেটা কাদের জন্য! এই প্রশ্নের জবাব সূরা আসরে দেওয়া আছে । নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে । তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও আমলে সলেহা করেছে আর হক কথা বলেছে ও সবর করেছে।
পবিত্র কুরানটা একটা ক্ষুদ্র পুস্তিকা নয়। এতে ৬৬৬৬টি আয়াত রয়েছে । আমরা যদি এই আয়াতগুলো নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পড়ি তাহলে আমাদের মনে কোন প্রশ্ন থাকে না। আল্লাহ কি বা কে - সে প্রশ্নের উত্তর তালাশ যদি আমরা করি, তাহলে তার সৃষ্টির দিকে তাকালেই তার মহিমা অনুভব করা যায়। সূরা রাদের ভিতর আল্লাহ আশ্চর্য এক মহিমার কথা বর্ণনা করেছেন- একই মাটির নির্যাস থেকে এক এক গাছের ফল এক এক স্বাদের- কোনটা তেতো, কোনটা মিষ্টি, কোনটা টক, আবার কোনটা ঝাল । কোন কোনটা আবার গুচ্ছ ধরা, কোনটা আবার গুচ্ছ ছাড়া । আবার সেগুলোর আছে বিচিত্র রং, বিচিত্র গন্ধ, বিচিত্র গড়নের । কোনটার পাতা বড়, কোনটার পাতা ছোট । আবার কোন গাছ বড়,কোনোটা ছোট বা লতানো।কত বিচিত্র এ পৃথিবী- একটু ভাবলেই আশ্চর্যে মাথা ঘুরে যায় । আবার পৃথিবীর সব সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি মানুষের দিকে তাকান- কেউ কালো, কেউ সাদা, কেউ লম্বা, কেউ বেটে- কত বিচিত্রতা! আবার মনোজগতের দিকে গেলে তো- সে বিচিত্রতার কথা বলে শেষই করা যাবে না। এত বিচিত্রতার এত সোন্দর্য রক্ষা করার ক্ষমতা কার আছে- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া! আবার দেখুন- এ পৃথিবীতে যে জিনিস যত বেশি দরকার সে জিনিস- আল্লাহ তায়ালা আমাদের অফুরন্তভাবে দিয়ে দিয়েছেন । যেমন- আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা- তা হল অক্সিজেন । একবার ভাবুন তো সিঙ্গেল মানুষ ২৪ ঘন্টায় কত হাজার গ্যালন অক্সিজেন গ্রহন করে! আর পৃথিবীর সাত শত কোটি মানুষের হিসাব তো বাদই দিলাম। আবার দেখুন! পানি, বায়ু, আগুন, মাটি- এগুলো আমাদের কত হিউজ পরিমানেই না রয়েছে। আর এগুলো এমন প্রচুর পরিমাণে থাকারই দরকার ছিল যার কারণ বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার অন্যদিকে দেখুন- যেগুলো আমাদের খুব কম দরকার সেগুলো খুব কম পরিমানই দিয়েছেন । যেমন- পাঁচ কেজি চালের ভাত একবারে রান্না করে যদি একবারে আপনাকে খেতে দেওয়া হয় – তাহলে কি আপনি খেয়ে উঠতে পারবেন ? পারবেন না। এমনকি ভাত খেতে বাধ্য করার জন্য আপনার মাথার উপর যদি একটা পিস্তল ধরা হয়- যে তোকে এতসব ভাত খেয়ে উঠতেই হবে- তাহলেও কি খেতে পারবেন ?- পারবেন না। অর্থাৎ খাদ্য আমাদের অল্প দরকার । তাই আল্লাহ সেটি আমাদের জন্য পরিমিত পরিমানই দিয়েছেন। তবে আমাদের প্রশ্ন জাগতে পারে – খাদ্যের জন্য তাহলে আমাদের এত হাহাকার কেন? হ্যাঁ- খাদ্য যা সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেন বলতে গেলে তার সিংহভাগই যথেচ্ছা মিসম্যানেজমেন্ট হয় । প্রকৃতপক্ষে, খাদ্য এবং সম্পদ আল্লাহ্ তায়ালা যেভাবে আমাদের মাঝে বন্ঠন করতে চেয়েছেন- মূলত সেভাবে তা কখনই বন্ঠিত হয় না । আমরা হিউজ পরিমান খাদ্য ও সম্পদ মনের অজান্তেই হোক বা শয়তানের প্ররোচনায় হোক দেদারছে তা অপচয় করে থাকি। আবার তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে ফিতরা, যাকাত বা দানের মত যে মহান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন তাও আমরা তো সঠিকভাবে পালন করি না । যেমন- ধরুন, এক বড়লোক বা ধনাঢ্য ব্যক্তির একটা কাঁঠাল খাওয়ার সখ হয়েছে। তার জন্য বাজার থেকে বিশাল আকারের এক সেরা মানের কাঁঠাল আনা হল। বেচারা ধনকুবের.... কাঁঠালের একটামাত্র সারি খেয়েই তার কাঁঠাল খাওয়ার সখ মিটে গেল! তারপর পুরা কাঁঠালই সে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসল। তাতে কি হলো? কাঁঠালের সৃষ্টিকর্তা যে পরিকল্পনায় কাঁঠাল সৃষ্টি করে ছিলেন- তাঁর সে উদ্দেশ্য কি পূরিত হল? না....তাঁর সৃষ্টির সেই মহত্ উদ্দেশ্যের পুরাটায় ব্যাহত হল! তিনি কাঁঠালটি হয়তো কমপক্ষে পাঁচ-দশ জনের খাদ্য হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন- কিন্তু অবিবেচক সৌখিনের অযাচিত সখের কারণে সেটা কি সম্ভব হইল? হইল না। আবার দেখুন! গম উত্পাদনে আমেরিকাসহ বিভিন্ন সয়ংসম্পন্ন দেশ যদি গমের কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য সমুদ্রে জাহাজে করে টন টন গম ফেলে দেয়। আর তাতে যদি ওরা মনে করে জাহাজের কম জ্বালানি ফুরিয়ে কম পরিমাণ গম রপ্তানি করে অধিক দাম হাকিয়ে অধিক পরিমাণ মুনাফা করা যাবে, তাহলে চূড়ান্তভাবে কি দাঁড়ালো? একবার ভাবুন তো! তা কতবড় নিকৃষ্ট অপচয়ের সামিল হবে! অথচ দেখুন! সৃষ্টিকর্তা তো আর হিংসুক নয় বা ব্যবসায়ীও নয় যে সে অপচয় করে বড় অংকের লাভ করার চিন্তা করবেন ।
আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)- কে সে সময় কাফের মুশরিকরা প্রশ্ন করতে কমে ছাড়েনি। তারা বলে- আমরা মরার পর পচিত-গলিত হব, হাড়-হাড্ডিসার হব তবুও একত্রিত হব? তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয়- তুমি কি দেখনি আকাশের মেঘমালাকে তা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হয় । সেই পানি মরা পৃথিবীকে প্রাণ সঞ্চারিত করে । ফল-ফসল গাছ-পালায় সবুজ শ্যামলীতে ভরে যায় । কিছুদিন পর সেই ফসল আবার পাকতে শুরু । তারপর এভাবে সবকিছু খড়কুটায় পরিণত হয় । এভাবে তাঁর পক্ষে আমাদের ফলন্ত জীবনকে নিভিয়ে দিয়ে তাতে আবার প্রাণ সঞ্চার করাটা খুবই মামুলি ব্যাপার !
Comments
Post a Comment