ফিরে আসো
ফিরে আসো
মো: এনামুল হক
চারিদিকে বসন্তের মৃদু হাওয়ায় মেহগনির সতেজ গায়ে থুপো থুপো সবুজ কচি পাতার উদ্বেলিত নৃত্য চর্চন যেন সুস্পষ্ট ঈদ আনন্দের স্বত:স্ফূর্ত প্রকাশ। পাশেই তরতর করে বেড়ে উঠা ফলভারে মাথা নোয়ানো তেতুল গাছটিতে মাটি রঙের ঝোকা ঝোকা তেতুলগুলো ডাল আর পাতার ফাঁকে সদা দোদুল্যমানতায় যেন জিবেই জল আনতে একটুকুও কার্পণ্য করছে না। বদ্ধঘরের জানালার গ্রিলের ফাঁকে তেতুলের লোভাতুর টকে সর্বাঙ্গ শিরশির করা অনুভূতিতে কুঞ্চিত জিহ্বাটা যেন বারবার টকটক আওয়াজে ব্যাকুল ইন্দ্র শিহোরিত করে যাচ্ছে। ওদিকে আবার উলুঙ্গ আমড়া গাছের সরু পত্রহীন শাখাগুলোর মাথায় সুরোভিত মুকুলের স্পন্ধে কাঁপছে সারা দুনিয়া। ঝুপড়ি বনে আম, কাঁঠাল আর লিচুর মুকুলগুলোর সদ্য গুটি হয়ে টসটসে রসালো আমেজে চিত্রিতি হওয়া দৃশ্যপটই আপন লীলায় ইঙ্গিত দিচ্ছে চিরায়ত বাংলার রঙিন মধু মাসের আনাগোনায়। প্রজাপতি আর কীট পতঙ্গ সেখানে মিলনবন্ধনে একাকার। মানুষ বাদে সব মাখলুকই যেন আজ আপন মহিমায় উদ্ভাসিত। অথচ তাদের মত পৃথিবীর কত মাজলুমের উপর শতশত বছর ধরে জুলুম করে চলেছি আমরা মানবরূপি ভয়ঙ্কর দানবেরা। আজ ওরা যেন কোন এক অদৃশ্য ইশারায় আপন মহিমায় নিজেদেরকে মেলে ধরে প্রকৃতির বুকে লাফিয়ে চলেছে দিকবিদিক আর বুকচাপা কষ্ট বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে আমাদের দিকে নিষ্পাপ শয়তানের মত মিটমিট করে হাঁসছে। চাঁদ সুরুজ আর তারকারা যেন একে অপর থেকে শতকোটি আলোকবর্ষ দূরত্ব বজায় রেখে মিটিমিটি করে জ্বলছে আর হোম কোয়ারান্টাইন কি জিনিস তার দৃষ্টান্ত উপস্থান করে বিচিত্র রঙে মজা নিচ্ছে। দানব গাড়ির চাকার তলে পিষ্ট হবার ভয়ে জবোথবো হওয়া পিঁপিলিকাটাও আজ মহাসড়কের মাঝখানে বালবাচ্চা নিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। কি জানি অবুলা মাজলুমের অতৃপ্ত আত্মার এতটুকু স্বস্তি দিতেই কিনা রহস্যময় বিধাতার এমন লৌকিক খেলা। গভীর পানির ডলফিনেরা আজ নাকি উঁকি মেরে দেখতে আসছে সমুদ্র সৈকতের পর্যটকরূপি মানুষগুলা গেল কৈ। অগাধ পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত থাকা আস্তিক নাস্তিক সমগ্র মানবকুল আজ আপন ধর্মের প্রভুর স্বরণে ব্যস্ত হয়ে প্রকৃত ইয়া নফছিতে মত্ত। অথচ এসব মানুষের লোক দেখানো ইবাদত আর কার্যকলাপে এতোদিন প্রভু কতইনা ত্যক্ত বিরক্ত ছিল। আজ বোধ হয় সর্বশক্তিমানের সেই চিরন্তন সত্ত্বার সদা জাগ্রত বিবেক সমাজ দেখানো ধর্মভীরুদের ভীড়ে ঠাসা সেই মসজিদ কিংবা পবিত্র কাবাঘর কিছুদিন জনমানবশূন্য রেখে লোক দেখানো ভণ্ডের বিষাক্ত পদচিহ্ণের ছাপ থেকে রেহায় দিয়ে পবিত্র করছে তাঁর ঐ পবিত্র ঘরগুলো। সত্যিই আজ এই অদৃশ্য গজবের সুদৃশ্য নিরাবতা স্বদম্ভে বলে দিচ্ছে পাপিষ্ট বিষাক্ত আত্মার আশ্রয় সেখানে নেই। ফেরেস্তাদের আপত্তির মুখেও বড় শখ করে যে মানবজাতি মাবুদ এই পৃথিবীতে বিচরণ করিয়েছিল, তার এইযে করুন হাল সৃষ্টিকর্তার প্রকৃতপক্ষেই বড় কষ্টের কারণ। যেহেতু প্রভু আমাদের খারাপ চায় না, তাই যুগে যুগে তাঁর প্রতিশ্রুত নানা বিপর্যয়ে এই অকৃতজ্ঞদের ফিরিয়ে আনার নানারকম উত্তম ব্যবস্থা করেন। কিন্তু মাকাল ফলের মত চাকচিক্যময় ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর মোহে আমরা বেখয়াল মানুষ তা বেমালুম ভুলে যায়। তাঁর কুদরোতি ইশারা আমরা বুঝতে বারবার ব্যর্থ হই। ফাঁদের ভিতর সুগন্ধযুক্ত টোপে ইঁদুর আটকা পড়ার মত অর্থ-কড়ি, টাকা-পয়সা,সন্তান-সন্ততি যে আসলেই কিচ্ছু না তা মহান রব আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বারবার ওয়ার্নিং দেন যাতে আমরা ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে আবার তাঁর দিকে ফিরে আসি। অথচ সেই সিগনাল বুঝতে আমরা হতভাগা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছি। কতরকম শর্তারোপ করার পর হযরত মুসা (আ:) এর সাথে সরাসরি সেই মহান রব্বুল আলামিন কথা বলেছেন। অথচ বিনাশর্তে তার ত্রিশ পারার এক মহামূল্যবান কথার ডিকশোনারি আমাদের মাঝে আজ অবধি দিয়ে দিয়েছেন যা পড়লেই মনে হয় তিনি সরাসরি কত উত্তমভাবে তাঁর পাক কালাম দিয়ে আমাদেরকে অনবরত বুঝ দান করে যাচ্ছেন। শেফাদানকারি আলোকবর্তিকা তাঁর এই মহান কোরান আর তাঁর প্রিয় হাবিবের উত্তম আদর্শের জীবনাচরণ মেনে চলতে আমাদের কতই না কষ্ট হয়। অথচ শুধুমাত্র তাঁর পবিত্র কালামের অনুস্বরণ আর প্রিয় হাবিবের জীবনাচরণের অনূকরণই পারত তাঁর মেজাজি অভিমানের আগুনে ম্রিয়মান ধারার স্নিগ্ধ বারি ঝরাতে। যাদের বুঝ আছে তাদের তওবা করে এখনো ফিরে আসার সুযোগ আছে, আর যারা হতভাগা তাদের আর জিন্দেগিতেও সেই সুযোগ হবে না। অনন্ত মহাকালের গহ্বর হতে পাওয়া এক জাররা সময়ের হায়াতধারি অহংকারি দাপটের সাময়িক কপালপোড়া বড়লোকে আত্মা সেই আহ্বানে অবগাহন করতে গড়িমসি করে এখনও। তাঁর কুদরতি পায়ে সেজদায় অবনত হতে এখনও সাই দেয়না তার মন। অথচ মহান সৃষ্টিকর্তা চাপা ক্ষোভের অভিমানে সেই মনের কর্ণকুহরে এমনভাবে মোহর মেরে দিয়েছে যে আর কোনোদিন ঐ মূল্যবান সেজদায় অবনত হওয়ার ক্ষেত্রে পাপিষ্ট আত্মা আর সাই দিবেও না। তাকিয়ে দেখ হে কৃতজ্ঞ মন, মহাবিশ্বের প্রকৃতিতে আজ কত সব ঘটমান বিপর্যয় থমকে আছে,অথচ তা অব্যাহত আছে এই হতভাগা মানবজাতির উপর। ফিরে আসো হে মানবজাতি,ফিরে আসো।
Comments
Post a Comment