সিলেটে দ্বিতীয় দিন(লিচু টিলা)
সিলেটে দ্বিতীয় দিন(লিচু টিলা)
মোঃ এনামুল হক
সকালে কৈলাসটিলা থেকে এসে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। হাত মুখ না ধুয়েই আমি বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম। সিঁড়ি বেয়ে কৈলাশটিলার সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে গিয়ে কিছুটা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই ইচ্ছা থাকলেও শরীরে না কুলানোয় ঐদিন কোথাও আর ঘুরতে গেলাম না। ফলশ্রুতিতে বন্ধু আলীর সাথে সোজা বাসায় চলে আসা। যাইহোক, অনেকক্ষণ ফ্যানের বাতাসে বিশ্রাম নেবার পরে ওয়াশ রুমে গেলাম গোসল করব বলে এবং সেখানে যথারীতি শাওয়ার ছেড়ে অনেক সময় নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে গোসলও সারা হলো। এরপর জোহরের নামাজ পড়েই বিছানায় গিয়ে ক্লান্ত শরীরে গা এলিয়ে দিতেই কখন যে চোখে শান্তির ঘুম নেমে এসেছে তা আমি টেরই পাইনি। এরপর ঘুম থেকে উঠে দেখি আসরের নির্দিষ্ট সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। তাই চটজলদি উঠেই অজু করে আসরের নামাজ সেরে নিলাম। বন্ধু আলি ওদিকে ভাবির সাথে ইফতার বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। নামাজ পড়ে আলীকে গলা ছেড়ে বললাম, "দোস্ত ! আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। দরজাটা খুলে দে।" একথা শুনতেই ও গেট খুলে দিলো এবং বলল, "তুই তাহলে আমাদের এই লিচু টিলার ঐ পিছন পাশটায় একটু ঘুরে আয় দোস্ত। ওখানকার পরিবেশটাও খুব চমৎকার পাবি।" আমি ওর কথা মতো বাসার পাশ ঘেঁষে ক্রমান্বয়ে উঁচুতে ওঠা আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ বেয়ে টিলার উপরে উঠতে লাগলাম। এরপর সন্তর্পনে পা ফেলতে ফেলতে সবচেয়ে উঁচু জায়গার চূড়াতে পৌঁছে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি, এতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক লীলাখেলা! লালচে ভূমির উপর সবুজ ঝুপড়ি গাছের গম্বুজগুলো সত্যিই তখন আমার মুহুর্মুহু হৃদয় হরণ করে চলছিল। সেই সাথে নয়নাভিরাম দৃশ্যের মাঝে বনফুলের অকৃত্রিম মিষ্টি ঘ্রাণেও চঞ্চল মন মহুয়ারা সত্যিই বিমোহিত হয়ে যাচ্ছিল। তাই প্রজাপতির মতো পাখা না থাকলেও আমি যেন অদৃশ্য পাখায় ভর করে এ ফুল ও ফুলের সুবাসিত ঘ্রাণের বাহুডোরে ইচ্ছেমতো অবগাহন করছিলাম। টিলার ঢাল জুড়ে আনারসের চাষ। তার নিচে লাভ আকৃতির লেকের মতো ছোট একটা পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে সবুজ গাছের জলজলে প্রতিচ্ছবি যেন প্রাণ মাতানো সৌন্দর্যের বাজার বসিয়েছে। সবুজ গঙ্গায় অবগাহন করে চারিদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এরই মাঝে লাল সূর্যটা আরো টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে তার নির্দিষ্ট সময় মতো পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে আপন মহিমায়। অথচ আমি খেয়ালই করিনি যে আমার ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে। যাইহোক, এতদিন জানলেও, আজই প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম, আমাদের জাতীয় পতাকাটায় কেন সবুজের মাঝে টকটকে লাল বৃত্ত ব্যবহার করা হয়। যাইহোক, অনুভূতির সর্বাঙ্গ যখন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জাদুকরী আকর্ষণে বুঁদ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তখন হঠাত খেয়াল হলো, ওহ! আমার না ইফতারের জন্য বাসায় ফিরে যেতে হবে! তাই আমি হন্তদন্ত হয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এলাম। এসে দেখি, আলী তার ওয়াইফের সাথে রকমারি ইফতারি রেডি করে বসে আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে ইফতারি সামনে নিয়ে বসলেই বন্ধু আলী বলে ওঠে, "দোস্ত, তুই দোয়া কর। তুই তো মুসাফির। মুসাফিরের দোয়া আল্লাহ্ নিশ্চিত কবুল করে।" যাইহোক আমি বন্ধুর অনুরোধে ইফতার সামনে করে একটা সংক্ষিপ্ত দোয়া করলাম। অতঃপর ইফতারি শেষ করে আমারই ঈমামতিতে দুজন মাগরিবের নামাজ শেষ করি এবং পরে দুই বন্ধু জায়নামাজে বসেই অনেক দিন পর কিছু মনের কথা শেয়ার করলাম।
Comments
Post a Comment